স্পোর্টস ডেস্ক: কথার লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আভাস দিলেও মাঠের খেলায় আর সেটি পারলো নেদারল্যান্ডস। ডাচদের ৯৯ রানে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিল টম লাথামের দল। বোলিং দিয়ে নিউজিল্যান্ডকে বেশ চাপে রাখলেও সেটা ব্যাটসম্যানরা প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি ডাচদের কেউই। ফলে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় পরাজয় বরণ করে নিতে হলো তাদের।
নামেধামে নিউজিল্যান্ডের ধারে কাছেও নেই নেদারল্যান্ডস। হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। শুরুটা দেখেশুনে করেন কিউই দুই ওপেনার। ৭৩ বলের উদ্বোধনী জুটিতে ৬৭ রান তোলেন ডেভন কনওয়ে আর উইল ইয়ং।
৪০ বলে ৩২ করা কনওয়েকে সাজঘরে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন ফন ডার মারউই। দ্বিতীয় উইকেটে ৮৪ বলে ৭৭ রানের আরেকটি জুটি গড়েন রাচিন রাবিন্দ্রা আর উইল ইয়ং।
৮০ বলে ৭ চার আর ২ ছক্কায় ৭০ করে উইকেট দিয়ে আসেন ইয়ং। হাফসেঞ্চুরি পূরণ করার পর রাচিন রাবিন্দ্রও সাজঘরে ফেরেন। ৫১ বলে ৫১ রানের ইনিংসে ৩টি চার আর একটি ছক্কা হাঁকান রাবিন্দ্র।
ইয়ং-রাবিন্দ্রর মতো হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়ার সুযোগ ছিল ড্যারেল মিচেলেরও। তবে ফন ম্যাকেরনের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় তাকে। ৪৭ বলে ৫ চার আর দুই ছক্কায় মিচেল করেন ৪৮ রান।
এরপর দ্রুতই গ্লেন ফিলিপস (৪) আর মার্ক চ্যাপম্যানকে (৫) তুলে নেয় ডাচরা। ১৬ রানের মধ্যে ৩টি উইকেট হারিয়ে রানের গতি কিছুটা কমে যায় নিউজিল্যান্ডের।
তবে এরপর টম ল্যাথাম মারকুটে খেলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন, দলকে নিয়ে গেছেন তিনশোর পথে। ৪৬ বলে ৫৩ রানের ইনিংসে ৬টি চার আর একটি ছক্কা হাঁকান কিউই অধিনায়ক। শেষদিকে মিচেল স্যান্টনার ১৭ বলে খেলেন ৩৬ রানের হার না মানা ঝোড়ো ইনিংস। ৪ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাট হেনরি। নিউজিল্যান্ড শেষ ৩ ওভারে এক উইকেট হারিয়ে নিয়েছে ৪৬ রান। নেদারল্যান্ডসের আরিয়ান দত্ত, পল ফন ম্যাকেরেন আর ফন ডার মারউই নেন দুটি করে উইকেট।
নিউজিল্যান্ডের দেয়া ৩২৩ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে সাবধানী ব্যাটিং করতে থাকেন দুই ওপেনার ম্যাক্স ও’দাউদ ও বিক্রমজিৎ সিং। প্রথম ৫ ওভারেই বোল্ট ও ম্যাট হেনরির মত বোলারদের মোকাবেলা করে ১৭ রান তুলে ফেলেন তারা বিনা উইকেটে।
কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি বিক্রমজিৎ সিং। ৬ষ্ঠ ওভারেই কিউইদের হয়ে প্রথম আঘাত হানেন ম্যাট হেনরি। বিক্রমজিতকে ১২ রানে ফেরান এই পেসার।
ম্যাক্স ও’দাউদও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তিনিও ১১তম ওভারে স্যান্টনারের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন। ১১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদে পড়ে নেদারল্যান্ডস।
এই বিপদে ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হন কলিন অ্যাকারম্যান ও বাস ডি লিডি। তারা দুজনই সাময়িক বিপর্যয় সামাল দেন। ১৭তম ওভারে বাস ডি লিডি ট্রেন্ট বোল্টের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ১৮ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। তবে আরেক প্রান্ত আগলে ছিলেন অ্যাকারম্যান।
কিউই বোলারদের বিপক্ষে আগ্রাসী ব্যাটিং করে ৫৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার ৩য় অর্ধশতক। পঞ্চাশ পেরুনোর পর কিছুটা খেই হারান তিনি। ৭৩ বলে ৬৯ রান করে মিচেল স্যান্টনারের বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিন। কার্যত নেদারল্যান্ডসের লড়াইয়ের ক্ষমতা তখনই শেষ হয়ে যায়।
অ্যাকারম্যানকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন স্কট অ্যাডওয়ার্ড। তিনিও ৩৫তম ওভারে স্যান্টনারের শিকার হন ৩০ রান করে। ভ্যান ডার মারওয়েও ১ রান করে স্যান্টনারের বলে আউট হন। ৭ উইকেট হারিয়ে কার্যত ম্যাচ শেষ করে ফেলে কিউইরা। শেষ দিকে সিব্র্যান্ড অ্যাঙ্গেলব্রেখট ও রায়ান ক্লেইন কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে। দুইজনের ২৭ বলে ১৮ রানের জুটি ভাঙেন স্যান্টনার।
এবারের বিশ্বকাপে প্রথম বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখালেন এই বা হাতি স্পিনার। শেষ দিকে আরো কোন ডাচ ব্যাটার দাঁড়াতে না পারলে রানেই ২২৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় তারা। আরিয়ান দত্ত দশ নম্বরে নেমে রান ১১ রান করেন। স্যান্টনার ৫টি, ম্যাট হেনরি ৩টি ও রাবিন্দ্রা ১টি করে উইকেট নেন।